Designation: অবঃসর প্রাপ্ত সরকারী চাকুরীজীবী
Phone:
Email:
Email:
মেয়াদ কাল
১৪-১০-২০০৯ থেকে ১৩-০৪-২০১০
Address:
জাকারিয়া সাহেব এর জীবন বিবরণী
জীবনকে উপভোগ করা যায় সমাজ সেবার মধ্যে দিয়ে।মিতভাষী মানুষ্টি তার প্রমান রেখেছেন জীবনে। মোঃ জাকারিয়া ১৯৪১ সালের ৩০ জানুয়ারী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার পানিশ্বর গ্রামে এক জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মহরুম মোঃ শফি ,মাতা মোছাঃ শাহেদা খাতুন।তাদের আদি বাড়ি শাহবাজপুর।
এলাকায় স্কুল না থাকায় তাকে ফুফুর সাথে কোলখাতাতে কলিনস ইনস্টিটিউটে প্রি প্রাইমারীতে পড়তে হয়েছে। ১৯৪৬ সালে দাঙ্গার সময়ে তার চাচা হাসনাত মোহাম্মদ শামসুল আলম মেদেনিপুরে পুলিশের সুপারেনটেন্ড এস পি পদে কর্মরত ছিলেন। ভারত বিভক্তির পর ১৯৪৮ সালের তিনি শুরুতে ঢাকায় চলে আসেন। ভ্রাতৃষ্পুত্র জাকারিয়াকে মিটফোর্ডের নিকটস্থ আরমানিটোলা হাই স্কুলে ভর্তি করে দেন । জাকারিয়া সাহেব সবার কাছে জাকের হিসাবে পরিচিত। জাকের সাহেব পুর্ব পাকিস্থান স্কুল ফুটবল টিমে গোলকিপার হিসাবে দল ভুক্ত ছিল। ঢাকার কে এম জুবিলী স্কুলে অধ্যয়ন কালে মোঃ জাকারিয়া ১৯৫৬ সালে ম্যাট্রিক ,জগনাথ কলেজ থেকে ১৯৫৮ সালে আই ,এ ।ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে ১৯৬১ সালে ইতিহাসে সম্মান এবং ১৯৬২ সালে এম , এ ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে তিনটি ব্লু খেতাব প্রাপ্ত ক্রীড়াবিদ। ফুটবল, ক্রিকেট ও হকিতে কৃতি খেলোয়াড় ছিলেন।
কর্মজীবনঃ
১৯৬৫ সালে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা হিসাবে তার প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন। মাত্র দুই বছর তিনি এ পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। পরে ১৯৬৮ সালে স্পেশিয়ালইজড শিপিং এন্ড কোং নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন এবং মনে প্রানে ব্যবসায় নিয়োজিত হন। স্পেশিয়ালইজড শিপিং এন্ড ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড বাংলাদেশ তৈল বাহী জাহাজ পরিচালনা ও মালিকানার ক্ষেত্রে পথিকৃৎ।
মুক্তিযুদ্ধে এম জাকারিয়ার অবদানঃ
তিনি একাধারে ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তার অবদান বিরল ও অনুকরণীয়। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের প্রয়োজনে জেনারেল এম এ জি ওসমানী ও দুই নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশারফের চাহিদা মোতাবেক তৈল্বাহী ট্যাংকার দুটির গতিপথ দিন তারিখ সহ জানিয়ে দেন জনাব জাকারিয়া। এই তথ্যের ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধারা ওনার ১০০০টন ধারন ক্ষমতার সপ্তডিংগা আক্রমণ করে পুড়িয়ে দেয়। মুক্তিযুদ্ধে স্পেশিয়ালইজড শিপিং এন্ড ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডের এটা ছিল অন্যতম গুরুত্ব পুর্ন অবদান। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত এই নিবেদিত দেশ প্রেমিক সপ্তডিংগা জাহাজের ঋণ বাংলাদেশ কেই পরিশোধ করেছেন । তিনি নিজ তৈল্বাবাহী জাহাজকে পুড়িয়ে ডুবিয়ে দিতে সাহায্য করে পৃথিবীকে যুদ্ধের ভয়াবহতা জানাতে চেয়ে ছিলেন ও জানাতে চেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের সফলতা।
তার সাহায্য সহযোগিতায় ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম জনহিতকর প্রতিষ্ঠান গণ স্বাস্থ্য পুনর্বাসন কেন্দ্র। মোঃ জাকারিয়া গন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অন্যতম ট্রাস্টি। তিনি মাসিক গন স্বাস্থ্য পত্রিকার প্রকাশক ও ছিলেন।
ব্যক্তিগত উপলদ্ধি ও প্রতিষ্ঠাতাঃ
মোঃ জাকারিয়া শৈশব ও যৌবনে দুজন মহৎ ব্যক্তির নিবিড় সান্নিধ্য লাভের সুযোগ পেয়েছেন।তাদের আদর্শ ও কর্মের প্রভাব রয়েছে তার জীবনে,চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে এবং কর্মের সুন্দর ভাবনায় । উল্লেখিত মহৎ ব্যক্তিদ্বয়ের মধ্যে একজন, তার চাচা এ এইচ এস শামসুল আলম । তিনি ছিলেন পরোপকারী ,স্পষ্টবাদী,একজন মানুষ। তিনি ভারতীয় পুলিশ সার্ভিসের সদস্য ছিলেন। রাজারবাগ পুলিশ লাইন, বি এ ডি সি ও প্ল্যানিং কমিশন সৃষ্টিতে তার অবদান অবিস্মরণীয়। তিনি পাকিস্তান প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য ছিলেন।
অপরজন তার শ্রদ্ধেয় শ্বশুর। দেবতার মতো বিরল ব্যক্তিত্বের অধিকারী সাদা মনের মানুষ সমাজ সেবক, পরোপকারী ,মরহুম মোঃ ইসমাইল খান। তার নিজ গ্রামে দুটি স্কুল স্থাপনে তার অবদান অনস্বীকার্য। একটি স্থাপিত হয়েছে তার ছোট চাচা র নামে এ এইচ শামসুল আলম উচ্চ বিদ্যালয় যেখানে উনি জায়গা কিনে দিয়েছেন। স্কুল ঘর করার জন্য ১০ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছেন। অপর টি পানিশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়।
পারিবারিক তথ্যঃ
দাউদকান্দির কৃতী সন্তান মোঃ ইসমাইল খানের মেধাবী কন্যা ঢাকা কলেজের শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত অধ্যাপিকা আলতাফুন্নেসার সাথে ১৯৭২ সালের ১৫ জুন তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুটি সন্তান । তার ছেলে হাসিব জাকারিয়া একজন শিক্ষক,আলোকচিত্রি এবং কিউওরেটর। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের মার্কেটিং বিভাগ থেকে ১৯৯৪ সালে স্নাতক এবং ১৯৯৬ সালে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।
মেয়ে তাসনিম জাকারিয়া তীনা হলিক্রস থেকে এস এস সি ও এইচ এস সি এবং বাংলাদেশ মেডিকেল থেকে এমবিবিএস পাশ করেছেন।
তার সৎ জীবন,কঠোর পরিশ্রম ও মানব প্রেম আজও সকলের জন্য অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে,তিনি ২০২ সালে পরলোক গমন করেন।আল্লাহ উনাকে বেহস্থ নসীব করুক। তিনি আমাদের কাছ থেকে চলে গিয়েও রেখে গেছেন অমলিন স্মৃতি ও অমুল্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।